মোঃ মেহেদী হাসান সবুজ বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি :
তখন ১৯৫৪ সাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে গৃহপরিচারক হিসেবে আসেন নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার সদর ইউপির চাকরাইল গ্রামের গহের আলী মোল্লা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বয়স তখন সাত (৭) বছর। শিশু শেখ হাসিনা, শেখ রেহেনাসহ বাড়ির ছোটদের দেখাশোনার দায়িত্ব ভার পড়ে তার কাঁধে। শেখ হাসিনাসহ অন্যরা সরাসরি বঙ্গবন্ধুর কাছে যে আবদার জানাতে পারতেন না, তা উত্থাপিত হতো গহের আলীর মাধ্যমে। এভাবে বঙ্গবন্ধু পরিবারের ছোটদের কাছে গহের আলী মোল্লা হয়ে উঠেন ”গহের কাকু’। শেখ হাসিনার সেই ‘গহের কাকু’ আজ আর নেই। বদলগাছী সদরের চাকরাইল গ্রামে বসত ভিটা আগলে ছিলেন তার বিধবা স্ত্রী রওশনারা, কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে তা-ও হারাতে হয় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সেচখাল খননে। স্বামীর রেখে যাওয়া সম্বল হারিয়ে পথে পথে ঘুরতে হয় তাকে, উপজেলার বিভিন্ন অফিসে ধর্না দিয়েও মেলেনি মাথা গোঁজার মতো কোন জায়গা। নিরুপায় হয়ে বদলগাছী-পত্নীতলা মেইন রোড সংলগ্ন বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া অফিস এর পার্শ্বে কোন মতে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে তার, কিন্তু তাতেই বা লাভ কি! পেটে নেই ভাত, তাই জীবিকার তাগিদে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ভিক্ষাবিত্তি করে কোন রকমে দিন কেটে যাচ্ছে তার। বদলগাছী চৌরাস্তায় এক দোকানে ভিক্ষা করতে দেখে তার কাছে গহের আলীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, গহের আলী মোল্লা কিশোর বয়সে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে কাজ শুরু করছিলেন। বিয়ের পর তিনি খুব কম আসতেন বাড়িতে, বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে অতিথি আপ্যায়ন ও প্রয়োজনীয় সাংসারিক কাজকর্ম করতেন তিনি। আমাকে বেশিরভাগ সময় আমার বাবার বাড়ি বগুড়া আদমদিঘী উপজেলার বোদলা মালশন গ্রামে থাকতে হয়েছে। এভাবেই কেটে যায় বছরের পর বছর, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে হত্যাকান্ডের শিকার হলে আমার স্বামী বাড়িতে ফিরে আসেন। এরপর তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। রওশনারা আরো বলেন, তার স্বামী কিছুই রেখে যেতে পারেননি তার তিন ছেলে রশিদ, মুকুল ও বকুলের জন্য, তবে তারা আলাদা হয়ে দিন মজুরের কাজ করে কোন রকমে নিজ নিজ সংসার চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে মৃত গহের আলীর ছেলে বকুল জানান, আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর খুব কাছের মানুষ ছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পর আমাদের জীবনে নেমে আসে ঘনঅন্ধকার, দিনমজুরি কাজ করে কোন রকমে সংসার চলে আমাদের, আমার মা রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে, আমরা যতটুকু পারি মাকে দেখাশুনা করি। বর্তমান সরকার অসহায় গরীব খেটে খাওয়া মানুষের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে থাকলেও! আমরা তা হতে বঞ্চিত। স্থানীয় এলাকাবাসির কাছে গহের আলীর পরিবারের ব্যাপারে জানতে চাইলে এক বৃদ্ধ বলেন, গহের আলী মোল্লা বঙ্গবন্ধুর বাড়িত কাজ করুচলো, মোল্লা মরে যাওয়ার পর তার বউ ছল এখন দুঃখ কষ্টে জীবনযাপন করুচে, মোল্লার বউ মানসের বাড়িত দোকানত ভিক্ষা করে বেড়ায়। বাটারা মানসের বাড়িত কাম করে। এলাকার বিশিষ্টজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ কালে তারা গহের আলীর পরিবারের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুদৃষ্টি কামনা করেন।