সদ্যপ্রাপ্ত

দেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশ বহন করে পরিবার

ইউনেস্কো গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট
এডুকেশনটুডে রিপোর্ট:
বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশই বহন করে শিক্ষার্থীদের পরিবার। আর শিক্ষা ব্যয় সবচেয়ে বেশি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় ৩ গুণ শিক্ষা ব্যয় বহন করতে হয় অভিভাবকদের। বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনের ক্ষেত্রে এ ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় ৯ গুণ। ইউনেস্কো ও ব্র্যাকের যৌথ গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণায় দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল। আবার মাধ্যমিক পর্যায়ের ৯৪ শতাংশই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পাঠ নিয়ে থাকে। গতকাল রাজধানীর প্যানপ্যাসেফিক সোনারগাঁও হোটেলে এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।

‘ইউনেস্কো গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ায় শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের অবদানের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়। ব্র্যাকের চেয়ারপাসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানে শিক্ষা ব্যয়ের ৫৭ শতাংশ বহন করে পরিবার। নেপালে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় পরিবারের ব্যয় ৬৩ শতাংশ এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে ৭৫ শতাংশ, যেখানে সরকারি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে এই ব্যয় হার ৮ শতাংশ। দুটি প্রধান শহরে শীর্ষ চতুর্থাংশ পরিবারের ধারা মাসিক ফি প্রদানের হার নিম্ন চতুর্থাংশ পরিবারের তুলনায় চার থেকে আটগুণ বেশি।

ভারতে শীর্ষ ২০ শতাংশ পরিবার নিচের ২০ শতাংশ পরিবারের তুলনায় সরকারি, বেসরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এবং অনুদানবিহীন সব রকম স্কুলে প্রায় চারগুণ বেশি ব্যয় করে। ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে পরিবার সরকারি স্কুলের তুলনায় বেসরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এবং অনুদানবিহীন স্কুলে পাঁচগুণ বেশি ব্যয় করেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ১২ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় করে এবং ৬ শতাংশ পরিবার স্কুলের ফি মেটাতে ঋণ করে থাকে। বাংলাদেশে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পরিবার ঋণ করে সন্তানদের বেসরকারি পলিটেকনিকে পড়াশোনার খরচ মেটায়।

ভুটান, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় অ-রাষ্ট্রীয় বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগ্রহণকারীদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার জন্য সরকারি শিক্ষার্থী ঋণ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি বৃদ্ধি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি’র ওপর কর আরোপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল। ফলস্বরূপ, কিছু সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়েছিল।

ইউনেস্কোর এ প্রতিবেদনের জন্য করা এক জরিপে দেখা যায়, ভারতের এক হাজার ৫০টি কম ফি’র বেসরকারি স্কুলের মধ্যে এক হাজার স্কুল শুধুমাত্র ফি’র ওপর নির্ভর করে চলে।

অন্যদিকে আফগানিস্তান, ভারত এবং নেপালের শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলো ফি’র ওপর নির্ভরতা এবং সরকারি তহবিলের অভাবকে তাদের কর্মসূচির উন্নয়নে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে মনে করে।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস প্রফেসর ড. মঞ্জুর আহমেদ, গণসাক্ষরতা অভিযানের প্রধান নির্বাহী রাশেদা কে চৌধুরী, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ প্রমুখ।

এদিকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গবেষণায় উঠে আসা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। জাতীয়করণের বিষয়ে তিনি বলেন, জাতীয়করণ আমরা করব কি-না এটা একটা সিদ্ধান্তের বিষয়। যেসব প্রতিষ্ঠানে জাতীয়করণ হয়েছে সেগুলো শিক্ষার মান কী রকম তা বিবেচনা করে দেখতে হয়। মন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রাইমারির সুন্দর অবকাঠামো আছে। কিন্তু অভিভাবকরা বাচ্চাদের কিন্ডারগার্টেনে দেন। যেখানে শিক্ষকের কোনো মান থাকে না। ২০১৮ সালে আমাদের ইশতেহার ছিল শিক্ষার মান উন্নয়ন। আমরা নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন করছি। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তাকে গড়ে তোলার চেষ্টা করবো। এখন মুখস্থবিদ্যা ও পরীক্ষাভীতি থাকবে না। শিক্ষার্থীরা খুশিমনে শিখবে। শিশু যা শিখবে তা প্রয়োগও করতে পারবে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ খুবই জরুরি। শিক্ষকদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এরপর বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। সাথে সারা বছর প্রশিক্ষণের আওতায় নেয়া হবে। দীপু মনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দু’জন শিক্ষক প্রশিক্ষিত থাকবে। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আমরা নানা ধরনের ক্লাব অ্যাকটিভিটি বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *