নিজস্ব প্রতিবেদক : অস্ট্রেলিয়ায় এক বাড়ির মালিকের ওপর হামলার ঘটনায় সেখানকার পুলিশের হাতে আটক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মোমেনা সোমা দেশে থাকাকালে অনলাইনের মাধ্যমে রেডিক্যালাইজড হয়েছিল। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি তার ছোট বোন আসমাউল হুসনা সুমনাকেও রেডিক্যালাইজড করেছিল। তাদের দুজনের মায়ের মৃত্যুর পর থেকে তারা এমন অবস্থায় জড়িয়ে পড়ে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সামনে এসব কথা জানান কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। অস্ট্রেলিয়ায় আটক সোমার সূত্র মতে, বাংলাদেশে তার বোনকে আটক করা হয়েছে। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে সুমনা জঙ্গিবাদে বড় বোনের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয় বলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জানিয়েছেন।
সুমনার বরাত দিয়ে মনিরুল বলেন, সোমা দেশে থাকাকালে নর্থসাউথের ছাত্রী ছিল। তখন অনলাইনে আল কায়েদা বা আইএসের বিভিন্ন বক্তব্য ও বিবৃতি সংগ্রহ করে পড়তো। এভাবে সে রেডিক্যালাইজড হয়। গত বছর ১ ফেব্রয়ারি ২৫ শতাংশ স্কলারশিপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় যান সোমা। সেখানে যাওয়ার আগে সেখানে হামলার ঘটনা ঘটাবে বিষয়টি তার ছোট বোনকে জানিয়েছিল বলেও জানান মনিরুল। সোমা অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার পর সেখান থেকে তুরস্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু সে দেশের অ্যাম্বেসি তাকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি বলেও জানান মনিরুল ইসলাম।
মনিরুল আরো বলেন, বিভিন্ন দেশেই অনলাইন রেডিক্যালাইজড বা অপরাধ হচ্ছে। এ অনলাইনের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেকে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। এসব নিয়ে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশও হিমসিম খাচ্ছে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো মোকাবিলার চেষ্টা করছি। তবে বর্তমানে সেফল রেডিক্যালাইজড এমন একটা বিষয় যেখানে কোনো নেতা বা ওয়ার্কার দরকার হয় না। ওই ব্যক্তি নিজেই রেডিক্যালাইজড হচ্ছে। তারা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার উপাদান সংগ্রহ করে নিজেই জড়িয়ে পড়ছে। এমন ঘটনা বিশ্বের অনেক দেশেই ঘটছে এবং ঘটেছে।
মোমেনা সোমার বোনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। সেই মামলায় তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলেও জানান তিনি। গ্রেপ্তারকৃত সোমার সঙ্গে ২০১৫ ও ১৬ সালের দিকে নিখোঁজ নজিবুল্লাহ আনসারী নামের এক যুবকের বিয়ের কথা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের বিয়ে হয়নি। তবে নর্থসাউথে বিভিন্ন সময় আটক বা জঙ্গি অভিযানে নিহতের সঙ্গে এই দুই বোনের এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সম্পৃক্ততা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পায়নি।
গুলশানে জঙ্গিহামলার মামলার চার্জশিটসংক্রান্তে মনিরুল ইসলাম বলেন, গুলশান হামলা মামলার চার্জশিট যেকোনো দিন দেওয়া হবে। এর আগে গত ডিসেম্বরে এ চার্জশিট দেওয়ার কথাছিল। পরে সময় বাড়িয়ে জানুয়ারিতে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। সিটিটিসির অপর এক কর্মকর্তা জানান, যেহেতু এটা একটা বড় ঘটনা সেহেতু চার্জশিট প্রস্তুত হলেও চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে, যাতে চার্জশিটে কোনো ধরনের দুর্বলতা না থাকে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গিহামলা চালিয়ে বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ৬ জঙ্গি নিহত হয়। ওই ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্যও নিহত হন। এ ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করে পুলিশ।
