ফার্স্টনিউজবিডি ডেস্ক: সৈয়দ গোলাম কাদির। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কাসিম আলী সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। বয়সের বিবেচনায় সে বড় নয়। কিন্তু তার স্বপ্নটা অনেক বিশাল। দীর্ঘদিন ধরেই সে চেষ্টা চালিয়ে আসছিল একটি ড্রোন বানানোর।
অবশেষে তার সেই চেষ্টা সফল হয়েছে। মহান বিজয় দিবসে এই খুদে বিজ্ঞানীর তৈরি একটি ছোট ড্রোন তার নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাসিম আলী সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের আকাশে উড়িয়েছে।
ড্রোন তৈরি করা খুদে বিজ্ঞানী জানায়, সে গত অক্টোবর এর শেষের দিকে ড্রোনটির নির্মাণকাজ শুরু করে এবং গত ৫ ডিসেম্বর নির্মাণকাজ শেষ হয়। ড্রোনটির সঙ্গে স্থাপন করা হয়েছে Fpv … Range 600-1000m ক্যামেরা।
সে জানায় বাংলাদেশে ড্রোন এর পার্টস এর দাম খুবই বেশি। যার কারণে পার্টসগুলো চায়না থেকে Hobby RC BD এই পেজটি তাকে এনে দেয়। আর এই করোনার সময় যেকোনো কিছুই বাহির থেকে আসতে সময় লাগে। হাতের কাছে সব পার্টস থাকলে এইরকম ড্রোন ৩-৪ ঘন্টায় বানানো সম্ভব।
এছাড়া বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডদের জন্য তার এই ড্রোনটিতে তৈরি বলে জানায় এই খুদে বিজ্ঞানী।
সে জানায় আমি ট্রেজার গান ব্যবহার করতে চাচ্ছি। এটি এমন একটি বন্দুক যা কারো কোনো ক্ষতি করে না, কিন্তু যেকোনো অপরাধীকে আটকানোর জন্য এটি বেশ কার্যকর হবে। খুদে বিজ্ঞানী আরও জানায় বুলেট এর বদলে যে পিন ব্যবহার করা হয় তা কারো গায়ে খুব মারাত্মক একটা শক দিতে পারে, তাই যতই শক্তিশালী অপরাধী হোক না কেনো সে ঐ জায়গাতেই থেমে যেতে বাধ্য।
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড এটি দিয়ে কি করবে জানতে চাইলে উত্তরে খুদে বিজ্ঞানী জানায়, আমরা জানি যে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ ও আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ এর কিছু চোরা-কারবারি অবৈধ জিনিস নিয়ে অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করে বা পার্শ্ববর্তী দেশে যায়।
এক্ষেত্রে যখন বিজিবির সদস্যরা ক্যাম্পে অবস্থান করছেন সেই সময় যদি ড্রোনের ১.৫-২ কিলোমিটার এর একটি ফ্লাইট দেয়া যায় তাহলে যদি কোথাও ড্রোনের ক্যামেরায় সন্ধেহজনক কিছু দেখা যায় তখন ঐ জায়গায় বিজিবি সদস্যরা গিয়ে বিষয়টি বুঝে নিতে পারেন, আর যদি দেখা যায় যে কেউ একজন বর্ডার ক্রস করার চেষ্টা করছে সেই জায়গায় গিয়ে তাকে আটকানো সম্ভব হচ্ছে না তাহলে সেখানে বিজিবি সদস্যরা ড্রোন এর ট্রেজার গান ব্যবহার করতে পারেন।
সেক্ষেত্রে উনারা অপরাধিকে কিছু সময়ের জন্য আটকাতে পারছেন এবং সেই সময়ের ভিতরে তারা সেখানে গিয়ে অপরাধীকে ধরতে সক্ষম হবেন।
এছাড়াও চাহিদা অনুযায়ী আরো বিভিন্ন কাজে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে বলে জানায় সে। যেমন কৃষি জমিতে ম্যাপ এর মাধ্যমে কীটনাশক স্প্রে বা উচু জায়গায় আগুন নিভানোর কাজে বা দূর্গম এলাকায় ছোটখাটো জিনিস পাঠানো ইত্যাদি।
ড্রোনটির সঙ্গে কি কি স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে জানতে চাইলে জানায়, কয়েক দিন পর এতে টেলিমেট্রি সংযুক্ত করতে চাচ্ছে সে,টেলিমেট্রি যুক্ত করলে আমরা স্মার্টফোন থেকে যেকোনো নির্দেশ ড্রোনকে দিতে পারবো এবং বিভিন্ন ধরনের মিশন ড্রোনকে দিতে পারবো।
১.৭ কেজি ড্রোনটি তৈরি করতে তার প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এটির নিজস্ব ওজন সহ বহন ক্ষমতা ৪.১ কে.জি। যদি আরো ভালো মটর আর বড় ফ্রেম ব্যবহার করা যায় তাহলে বহন ক্ষমতা আরো বাড়ানো সম্ভব বলে জানায় সে।
প্রাথমিকভাবে এর রেঞ্জ ১.৫ কি.মি। কিন্তু তার কাছে উন্নত মানের ব্যাটারি না থাকায় সে এটিকে বেশি দূর নিয়ে যেতে পারে না।
সে এটিকে আরো বেশি প্রযুক্তিনির্ভর, আধুনিক ও জনকল্যাণময় করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। যদি প্রতিষ্ঠান বা সরকারের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হয় তাহলে আরো উন্নতমানের ড্রোন তৈরি করা সম্ভব।
ক্ষুদে বিজ্ঞানী জানায়, তার বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ তার মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যরা ও তার বন্ধু মুন্তাসির খান আদিব, মামা ওয়াহিদুল ইসলাম তফাদার ও বড় ভাই সহিদুল ইসলাম বুলবুল ড্রোনটি তৈরি করতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাকে উৎসাহ প্রদান ও সহযোগিতা করছেন।
এর আগে এস এস এফ রোবট (যেটি কোনো জায়গায় আগুন লাগলে সেখানে গিয়ে নিজে নিজে পানি স্প্রে করতে পারতো), এছাড়াও লেন্ড মাইন ডিফিউজ করার ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেত এমন একটি প্রজেক্ট সহ আরো কয়েকটি ইলেকট্রিক যন্ত্র তৈরি করেছে এই খুদে বিজ্ঞানী।
এছাড়া সে প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন প্রজেক্টে কাজ করছে বলে জানায়।
ক্ষুদে বিজ্ঞানী গোলাম কাদিরের ড্রোন তৈরি সম্পর্কে কাসিম আলী সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহাদুজ্জামান বলেন, আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের যে কোনো ধরনের বিজ্ঞানমনষ্ক গবেষণাকে উৎসাহিত করি। আমাদের এই শিক্ষার্থীর তৈরি ড্রোনটি বিজয় দিবসের দিন প্রথম বিদ্যালয়ের মাঠে আকাশে উড়ানো হয়। ক্ষুদে এই বিজ্ঞানীর এ আবিষ্কার আমাদের জন্য গর্বের।